ইয়োব
গ্রন্থস্বত্ব
কেউ প্রকৃতভাবে জানে না ইয়োব পুস্তকটি কে লিখেছিলেন। কোনো গ্রন্থকারকে চিহ্নিত করা হয় নি। খুব সম্ভবতঃ একাধিক গ্রন্থকার ছিলেন। এটা সম্ভব যে বাইবেলের যে কোনো পুস্তকের মধ্যে ইয়োব সবথেকে পুরনো। ইয়োব একজন উত্তম এবং ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন যিনি অসহ্য দুঃখ ভোগ করেছিলেন এবং তিনি ও তাঁর বন্ধুগণ বুঝতে চেষ্টা করেছিল তার জীবনে কেন এই বিপত্তি ঘটল। এই পুস্তকের মুখ্য ব্যক্তিত্ব সমূহ ইয়োব, তৈমনীয় ইলিফস, শুহীয় বিলদদ, নামাথীয় সোফর এবং বূষিয় ইলীহুকে অন্তর্ভুক্ত করে।
রচনার সময় এবং স্থান
অপরিচিত পুস্তকটির বেশিরভাগ অংশ সংকেত দেয় যে এটা বহু পূর্বে লেখা হয়েছিল, নির্বাসনের দিনের অথবা অব্যবহিত পরে এবং ইলীহু অধ্যায়টি হতে পারে আরও পরে।
গ্রাহক
প্রাচীন যিহুদীগণ এবং বাইবেলের ভবিষ্যত পাঠকগণ। এটা আবারও বিশ্বাস করা হয় যে ইয়োবের পুস্তকটির প্রকৃত শ্রোতৃমন্ডলী ছিল ক্রীতদাস করা ইসরায়েলী সন্তানগণ, এটা বিশ্বাস করা হয় মোশির ইচ্ছা ছিল তাদের কিছু সান্তনা দিতে যেহেতু তারা মিশরের অধীনে কষ্টভোগ করেছিল।
উদ্দেশ্য
ইয়োবের পুস্তকটি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করে: শয়তান আর্থিক এবং শারীরিক বিনাশ নিয়ে আসতে পারে না, শয়তান যা করতে পারে বা না পারে তার ওপর ঈশ্বরের ক্ষমতা থাকে। এটা বোঝা মানুষের ক্ষমতার বাইরে জগতে সমস্ত দুঃখ-কষ্টের পেছনে “কেন” হচ্ছে। দুষ্টরা তাদের যা প্রাপ্য তা তারা পাবে। দুঃখভোগকে আমাদের জীবনে কখনও কখনও অনুমতি দেওয়া হয় আমাদের শুদ্ধ করতে, বিচার করতে, শিক্ষা দিতে অথবা প্রাণ মন্ডলকে শক্তিশালী করতে।
বিষয়
কষ্টের মধ্য দিয়ে আশ্বীর্বাদ
রূপরেখা
1. ভূমিকা এবং শয়তানের আক্রমণ — 1:1-2:13
2. ইয়োবের তিন বন্ধুর সঙ্গে কষ্টের আলোচনা — 3:1-31:40
3. ইলীহু ঈশ্বরের উত্তমতাকে ঘোষণা করে — 32:1-37:24
4. ঈশ্বর ইয়োবের নিকট সার্বভৌমত্বকে প্রকাশ করেন — 38:1-41:34
5. ঈশ্বর ইয়োবকে পুন:স্থাপন করেন — 42:1-17
1
প্রস্তাবনা।
1 ঊষ দেশে ইয়োব নামে একজন লোক ছিলেন; তিনি নির্দোষ এবং সৎ ছিলেন, যিনি ঈশ্বরকে সম্মান করতেন এবং মন্দ থেকে দূরে থাকতেন। 2 তাঁর সাত ছেলে এবং তিন মেয়ে জন্মায়। 3 তাঁর সাত হাজার মেষ, তিন হাজার উঠ, পাঁচশো জোড়া বলদ এবং পাঁচশো গর্দ্দভী ছিল। তাঁর আরও অনেক দাস দাসী ছিল। পূর্ব দেশের লোকেদের মধ্যে এই লোকটি সব থেকে মহান ছিলেন। 4 তাঁর নিরুপিত দিনের, তাঁর প্রত্যেক ছেলেরা তাদের নিজের নিজের ঘরে ভোজ দিত এবং লোক পাঠিয়ে তাদের বোনেদের আনাত তাদের সবার সঙ্গে খাবার খাওয়ার এবং পান করার জন্য। 5 যখন ভোজের দিন গুলো শেষ হত, ইয়োব লোক পাঠিয়ে তাদের আনতেন এবং তাদের আরও একবার ঈশ্বরের কাছে পবিত্র করতেন। তিনি খুব সকালে উঠতেন এবং তাঁর প্রত্যেক সন্তানের জন্য হোমবলি উত্সর্গ করতেন, কারণ তিনি বলতেন, “হয়ত আমার সন্তানেরা পাপ করেছে এবং তাদের হৃদয়ে ঈশ্বরকে অভিশাপ দিয়েছে।” ইয়োব সব দিন এরকম করতেন।
ইয়োবের প্রথম পরীক্ষা।
6 এমন দিন একদিন যখন ঈশ্বরের পুত্ররা* স্বর্গদূত সদাপ্রভুর সামনে নিজেদের উপস্থিত করতে এলেন, শয়তানও তাদের মাঝে এলো। 7 সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কোথা থেকে এসেছ?” তখন শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিল এবং বলল, “পৃথিবীর এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম এবং পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিলাম।” 8 সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কি আমার দাস ইয়োবের প্রতি লক্ষ্য রেখেছ?
কারণ তার মত পৃথিবীতে কেউ নেই, একটি নিখুঁত এবং সৎ লোক,
যে ব্যক্তি ঈশ্বরকে ভয় করে এবং মন্দ থেকে দূরে থাকে।”
9 তখন শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিল এবং বলল, “ইয়োব কি ঈশ্বরকে বিনা কারণে ভয় করে? 10 তুমি কি তার চারিদিকে বেড়া দাও নি, তার বাড়ির চারিদিকে এবং তার সব কিছুর চারিদিকে যা তার আছে? তুমি তার হাতের কাজে আর্শীবাদ করেছ এবং তার সম্পত্তি দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে। 11 কিন্তু এখন তোমার হাত বাড়াও এবং তার যা কিছু আছে তাতে আক্রমণ কর এবং সে তোমাকে তোমার মুখের উপরেই ত্যাগ করবে।” 12 সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “দেখ, তার যা কিছু আছে তা তোমার হাতে আছে; কেবল তোমার হাত তার উপরে রাখবে না।” তাতে শয়তান সদাপ্রভুর সামনে থেকে চলে গেল। 13 পরে কোন এক দিন, যখন তাঁর ছেলেরা ও মেয়েরা তাদের বড় ভাইয়ের বাড়িতে খাচ্ছিল এবং আঙ্গুর রস পান করছিল, 14 একজন বার্তাবাহক ইয়োবের কাছে এল এবং বলল, “বলদগুলো হাল দিচ্ছিল এবং গাধীগুলি তাদের পাশে ঘাস খাচ্ছিল; 15 শিবায়ীয়েরা তাদের আক্রমণ করল এবং তাদের নিয়ে চলে গেল। সত্যি, তারা তলোয়ারের আঘাতে দাসেদের মেরে ফেলেছে; আমি একা পালিয়ে আপনাকে খবর দিতে এসেছি।”
16 যখন সে কথা বলছিল, আরেকজন এল এবং বলল, “ঈশ্বরের আগুন স্বর্গ থেকে পড়েছে এবং মেষপাল ও দাসেদের পুড়িয়ে দিয়েছে এবং আমি একা পালিয়ে আপনাকে খবর দিতে এসেছি।” 17 যখন সে কথা বলছিল, আরেকজন এল এবং বলল, “কলদীয়েরা তিন দল হয়ে উটের দলকে আক্রমণ করে এবং তাদের নিয়ে যায়। সত্যি এবং তারা তলোয়ারের আঘাতে দাসেদের মেরে ফেলেছে এবং আমি একা পালিয়ে আপনাকে খবর দিতে এসেছি।” 18 যখন সে কথা বলছিল, আরেকজন এল এবং বলল, “আপনার ছেলেরা এবং মেয়েরা তাদের বড় ভাইয়ের বাড়িতে খাচ্ছিল এবং আঙ্গুর রস পান করছিল। 19 একটা মহা ঝড় মরুভূমি থেকে এল এবং বাড়ির চার কোনে আঘাত করল আর এটা যুবকদের উপরে পড়ল এবং তারা মারা গেল আর আমি একা পালিয়ে আপনাকে খবর দিতে এসেছি।” 20 তখন ইয়োব উঠে দাঁড়ালেন, নিজের কাপড় ছিঁড়লেন, মাথা নেড়া করলেন, মাটিতে মুখ নত করে শুয়ে ঈশ্বরকে আরাধনা বা উপাসনা করলেন। 21 তিনি বললেন, “আমি আমার মায়ের গর্ভ থেকে উলঙ্গ এসেছি এবং আমি উলঙ্গ হয়েই সেখানে ফিরে যাব। আমার কাছে যা ছিল তা সদাপ্রভু দিয়েছেন আর সদাপ্রভুই তা নিয়েছেন;
সদাপ্রভুর নাম ধন্য হোক।”
22 এই সমস্ত বিষয়ে, ইয়োব কোন পাপ করলেন না, না তিনি বোকার মত ঈশ্বরকে দোষী করলেন।