হিতোপদেশ
গ্রন্থস্বত্ব
রাজা শলোমন হিতোপদেশের মুখ্য গ্রথকার হচ্ছেন। শলোমনের নাম 1:1, 10:1, এবং 25:1 এর মধ্যে দেখা যায়। অন্যান্য যোগদানকারীদের মধ্যে একদল লোক অন্তর্ভুক্ত হয় তাদেরকে বলা হয় “জ্ঞানী” যেমন আগুর, এবং রাজা লমুয়েল। বাইবেলের বাকি অংশের ন্যায়, হিতোপদেশ ঈশ্বরের পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত করে, বরং হয়ত অতি সুক্ষ্ম ভাবে। এই পুস্তকটি ইস্রায়েলীদের দেখিয়েছিল বেঁচে থাকার সঠিক পথ, ঈশ্বরের পথ। এটা সম্ভব যে ঈশ্বর শলোমনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন এই বিভাগটিকে নথিভুক্ত করতে জ্ঞানী কথার ওপর ভিত্তি করে যা তার সারা জীবনের মাধ্যমে প্রকট হয়েছিল।
রচনার সময় এবং স্থান
আনুমাণিক 971 থেকে 986 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়।
রাজা হিসাবে শলোমনের রাজত্বের দিন, হিতোপদেশ সহস্র বত্সর পূর্বে ইস্রায়েলে লেখা হয়েছিল, এটার প্রজ্ঞা যে কোনো দিনের র যে কোনো সংস্কৃতিতে প্রযোজ্য হচ্ছে।
গ্রাহক
হিতোপদেশের বিভিন্ন শোতৃমন্ডলী আছে। এটা পিতা-মাতার প্রতি সম্বোধিত করা হয় তাদের সন্তানদের নির্দেশ দেওয়ার জন্য। পুস্তকটি আবারও প্রযোজ্য হয় যুবক এবং যুবতীদের ওপর যারা জ্ঞানের অন্বেষণ করছে, এবং অবশেষে, এটা আজকের বাইবেল পাঠকদের কাছে বাস্তবিক উপদেশ প্রদান করে যারা ঈশ্বরীয় জীবন অতিবাহিত করতে চায়।
উদ্দেশ্য
হিতোপদেশের পুস্তকে, শলোমন ঈশ্বরের মনকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ করেন যেমন উঁচু এবং অতি উঁচু এবং স্বাভাবিক, সাধারণ, দৈনন্দিন পরিস্থিতির ওপরেও। এটা প্রতীত হয় যে শলোমনের একাগ্রতা থেকে কোনো বিষয় বস্তুই বাদ যায় নি। ব্যক্তিগত আচরণ, যৌন সম্বন্ধ, ব্যবসায়, সম্পদ, দান, উচ্চাকাঙ্খা, নিয়মানুবর্তিতা, ঋণ, শিশু-প্রতিপালন, চরিত্র, মদ্যপান, রাজনীতি, প্রতিশোধ, এবং ঈশ্বরত্ব বিষয়গুলো বহু বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যেগুলোকে জ্ঞানপূর্ণ বক্তব্যের সমৃদ্ধ সংগ্রহের মধ্যে আবৃত করা হয়েছে।
বিষয়
প্রজ্ঞা
রূপরেখা
1. প্রজ্ঞার গুণ — 1:1-9:18
2. শলোমনের হিতোপদেশ — 10:1-22:16
3. প্রজ্ঞার কথা — 22:17-29:27
4. আগুরের বাক্য — 30:1-33
5. লমুয়েলের বাক্য — 31:1-31
1
প্রস্তাবনা: উদ্দেশ্য এবং বিষয়।
শলোমনের হিতোপদেশ;
তিনি দায়ূদের ছেলে, ইস্রায়েলের রাজা।
এর মাধ্যমে প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাওয়া যায়,
অনুশাসন পাওয়া যায়;
উপদেশ পাওয়া যায় যাতে তুমি যা কিছু সঠিক,
ন্যায্য এবং ভালো তার মাধ্যমে জীবনযাপন করো,
যারা শিক্ষা পায়নি, তাদেরকে শিক্ষা দান করে
এবং যুবকদের জ্ঞান ও বিবেচনা দান করে।
জ্ঞানীরা শুনুক এবং তাদের জ্ঞানের বৃদ্ধি করুক
এবং বুদ্ধিমানেরা পরিচালনা লাভ করুক,
উপদেশ এবং নীতিকথা বুঝতে;
জ্ঞানীদের কথা ও তাঁদের ধাঁধা বুঝতে।
সদাপ্রভুর ভয় জ্ঞানের আরম্ভ;
নির্বোধেরা প্রজ্ঞা ও উপদেশ তুচ্ছ করে।
প্রজ্ঞাকে আলিঙ্গন করতে উপদেশ সমূহ। পাপ কার্যে প্রলোভনের বিরুদ্ধে সাবধানবাণী।
সন্তান, তুমি তোমার বাবার উপদেশ শোন,
তোমার মায়ের ব্যবস্থা সরিয়ে রেখো না।
সেগুলো তোমার মাথার শোভা জয়ের মালা
ও তোমার গলার হারস্বরূপ হবে।
10 আমার পুত্র, যদি পাপীরা তোমাকে প্রলোভন দেখায়,
তুমি তাদের ত্যাগ কর।
11 তারা যদি বলে, “আমাদের সঙ্গে এস,
আমরা হত্যা করবার জন্য লুকিয়ে থাকি,
নির্দোষদের অকারণে ধরবার জন্য লুকিয়ে থাকি,
12 এসো আমরা তাদেরকে পাতালের মত জীবন্ত গ্রাস করি,
যারা গর্তগামী তাদের মত, সম্পূর্ণভাবে৷
13 আমরা সব ধরনের বহুমূল্য ধন পাব,
অন্যের লুট করা জিনিস দিয়ে নিজের নিজের ঘর পূর্ণ করব,
14 তুমি আমাদের মধ্যে গুলিবাঁট কর,
আমাদের সবারই একটি থলি হবে;”
15 আমার পুত্র, তাদের সঙ্গে সেই পথে যেও না,
তাদের রাস্তা থেকে তোমার পা সরিয়ে নাও,
16 কারণ তাদের পা মন্দের দিকে দৌড়ায়,
তারা রক্তপাত করতে দ্রুত এগিয়ে যায়।
17 যখন পাখিটি দেখছে,
তখন তার চোখের সামনে জাল বিছিয়ে ফাঁদে ফেলা অর্থহীন।
18 ওই লোকগুলো নিজেদেরই রক্তপাত করতে লুকিয়ে থাকে,
তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য ফাঁদ পাতে।
19 তাদের পথ সেই রকম যারা মন্দ উপায়ে সম্পদ লাভ করে;
যারা সেই সম্পদ ধরে রাখে তা তাদের প্রাণ নিয়ে নেয়।
প্রজ্ঞার প্রত্যাখানের বিরুদ্ধে সাবধানবাণী।
20 প্রজ্ঞা রাস্তায় চেঁচিয়ে ডাকছে,
খোলা জায়গায় সে তার রব তোলে;
21 সে কোলাহলপূর্ণ পথের মাথায় ডাকে,
শহরের দরজায় সবার প্রবেশের জায়গায়, সে এই কথা বলে;
22 “তোমাদের যাদের জ্ঞান নেই আর কত দিন
তোমরা যা বোঝো না তা ভালোবাসবে?
নিন্দুকেরা কত দিন নিন্দায় আনন্দ করবে?
নির্বোধেরা, কত দিন জ্ঞানকে ঘৃণা করবে?
23 আমার অনুযোগে মন দাও;
দেখ, আমি তোমাদের ওপর আমার আত্মা সেচন করব,
আমার কথা তোমাদেরকে জানাবো।
24 আমি ডাকলাম এবং তুমি প্রত্যাখ্যান করলে;
আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম
কিন্তু কেউই মনোযোগ দিল না;
25 কিন্তু তোমরা আমার সব পরামর্শ অগ্রাহ্য করলে,
আমার তিরস্কারে মনোযোগ করলে না।
26 এজন্য তোমাদের বিপদে আমিও হাঁসব,
তোমাদের ভয় উপস্থিত হলে পরিহাস করব;
27 যখন ঝড়ের মত তোমাদের ভয় উপস্থিত হবে,
ঘুর্নিঝড়ের মত তোমাদের বিপদ আসবে,
যখন সঙ্কট ও সঙ্কোচ তোমাদের কাছে আসবে।
28 তখন সবাই আমাকে ডাকবে,
কিন্তু আমি উওর দেব না,
তারা স্বযত্নে আমার খোঁজ করবে,
কিন্তু আমাকে পাবে না;
29 কারণ তারা জ্ঞানকে ঘৃণা করত,
সদাপ্রভুর ভয় মানত না;
30 তারা আমার নির্দেশ অনুসরণ করত না
এবং তারা আমার সব অনুযোগ তুচ্ছ করত;
31 তারা তাদের আচরণের ফল ভোগ করবে
এবং তারা তাদের পরিকল্পনার ফলে নিজেদেরকে পূর্ণ করবে।
32 ফলে, নির্বোধদের বিপথে যাওয়ার
জন্য তাদেরকে হত্যা করবে,
বোকাদের উদাসীনতা তাদেরকে ধ্বংস করবে;
33 কিন্তু যে ব্যক্তি আমার কথা শুনে,
সে নির্ভয়ে বাস করবে, নিরাপদে বিশ্রাম করবে,
অমঙ্গলের ভয় থাকবে না।”