9
যীশু একজন পক্ষাঘাতীকে আরোগ্য করেন, ও তাহার পাপ ক্ষমা করেন।
1 পরে তিনি নৌকায় উঠে পার হলেন এবং নিজের শহরে এলেন। আর দেখ, কয়েকটি লোক তাঁর কাছে একজন পক্ষাঘাতীকে আনল, সে খাটের উপরে শোয়ানো ছিল। 2 তাদের বিশ্বাস দেখে যীশু সেই পক্ষাঘাতী রোগীকে বললেন, পুত্র, সাহস কর, তোমার পাপগুলি ক্ষমা করা হল। 3 আর দেখ, কয়েক জন ধর্মশিক্ষকরা মনে মনে বলল, “এ ব্যক্তি ঈশ্বরনিন্দা করছে।” 4 তখন যীশু তাদের চিন্তা বুঝতে পেরে বললেন, “তোমরা হৃদয়ে কেন কুচিন্তা করছ? 5 কারণ কোনটা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা হল’ বলা, না ‘তুমি উঠে বেড়াও’ বলা? 6 কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করতে মনুষ্যপুত্রের অধিকার আছে, এটা যেন তোমরা জানতে পার,” এই জন্য তিনি সেই পক্ষাঘাতীকে বললেন “ওঠ, তোমার বিছানা তুলে নাও এবং তোমার ঘরে চলে যাও।” 7 তখন সে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল। 8 তা দেখে সব লোক ভয় পেয়ে গেল, আর ঈশ্বর মানুষকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন বলে তার গৌরব করল।
মথির আহ্বান। সেই বিষয়ে যীশুর শিক্ষা।
9 সেই জায়গা থেকে যেতে যেতে যীশু দেখলেন, মথি নামে এক ব্যক্তি কর আদায়ের জায়গায় বসে আছে; তিনি তাঁকে বললেন, “আমার সঙ্গে এস।” তাতে তিনি উঠে তাঁর সঙ্গে চলে গেলেন। 10 পরে তিনি যখন মথির ঘরের মধ্যে খাবার খেতে বসলেন, আর অনেক কর আদায়কারী ও পাপী মানুষ এসে যীশুর এবং তাঁর শিষ্যদের খাবার খেতে বসল। 11 তা দেখে ফরীশীরা তাঁর শিষ্যদের বলল, তোমাদের গুরু কেন কর আদায়কারী ও পাপীদের সাথে খাবার খান? 12 যীশু তা শুনে তাদেরকে বললেন, সুস্থ লোকদের ডাক্তার দেখাবার দরকার নেই, কিন্তু অসুস্থদের প্রয়োজন আছে। 13 কিন্তু তোমরা গিয়ে শেখো, এই কথার মানে কি, “আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়”; কারণ আমি ধার্ম্মিকদের নয়, কিন্তু পাপীদেরকে ডাকতে এসেছি।
উপবাস বিষয়ে যীশুকে প্রশ্ন করলেন।
14 তখন যোহনের শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বলল, “ফরীশীরা ও আমরা অনেকবার উপবাস করি, কিন্তু আপনার শিষ্যরা উপবাস করে না, এর কারণ কি?” 15 যীশু তাদের বললেন, “বর সঙ্গে থাকতে কি লোকে দুঃখ করতে পারে?” কিন্তু এমন দিন আসবে, যখন তাদের কাছ থেকে বর চলে যাবেন; তখন তারা উপবাস করবে। 16 পুরাতন কাপড়ে কেউ নতুন কাপড়ের তালী দেয় না, কারণ তার তালীতে কাপড় ছিঁড়ে যায় এবং ছেঁড়াটা আরও বড় হয়। 17 আর লোকে পুরাতন চামড়ার থলিতে নতুন আঙুরের রস রাখে না; রাখলে চামড়ার থলিগুলি ফেটে যায়, তাতে দ্রাক্ষারস পড়ে যায়, চামড়ার থলিগুলিও নষ্ট হয়; না, কিন্তু লোকে নূতন চামড়ার থলিতে টাটকা দ্রাক্ষারস রাখে, তাতে উভয়েরই রক্ষা হয়।
যীশু এক অসুস্থ স্ত্রীলোককে সুস্থ করেন, ও একটি মৃত মেয়েকে জীবন দেন।
18 যীশু তাদের এই সব কথা বলছেন, আর দেখ, একজন তত্ত্বাবধায়ক এসে তাঁকে প্রণাম করে বললেন, আমার মেয়েটি এতক্ষনে মারা গিয়েছে; কিন্তু আপনি এসে তার উপরে হাত রাখুন, তাতে সে জীবিত হবে। 19 তখন যীশু উঠে তাঁর সঙ্গে গেলেন, তাঁর শিষ্যরাও চললেন। 20 আর দেখ, বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগগ্রস্ত একটি স্ত্রীলোক তাঁর পিছন দিক থাকে এসে তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করল; 21 কারণ সে মনে মনে বলছিল, আমি যদি কেবল ওনার কাপড় ছুঁতে পারি, তবেই আমি সুস্থ হব। 22 তখন যীশু মুখ ফিরিয়ে তাকে দেখে বললেন, বৎসে, সাহস কর, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করল। সেই দিনে স্ত্রীলোকটী সুস্থ হল। 23 পরে যীশু সেই তত্ত্বাবধায়ক এর বাড়িতে এসে যখন দেখলেন, বংশীবাদকরা রয়েছে, ও লোকেরা হৈ চৈ করছে, 24 তখন যীশু বললেন, সরে যাও, মেয়েটি তো মরে যায় নি, ঘুমিয়ে রয়েছে। তখন তারা তাঁকে ঠাট্টা করল। 25 কিন্তু লোকদেরকে বের করে দেওয়া হলে তিনি ভিতরে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরলেন, তাতে সে উঠে বসল। 26 আর এই কথা সেই দেশে ছড়িয়ে পড়ল।
যীশু দুই জন অন্ধকে ও একজন বোবাকে সুস্থ করেন।
27 পরে যীশু সেখান থেকে প্রস্থান করছিলেন, দুই জন অন্ধ তাঁকে অনুসরণ করছিল; তারা চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “হে দায়ূদ-সন্তান, আমাদের প্রতি দয়া করুন।” 28 তিনি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলে পর সেই অন্ধেরা তাঁর কাছে এলো; তখন যীশু তাদের বললেন, “তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, আমি এটা করতে পারি?” তারা তাঁকে বলল, “হ্যাঁ প্রভু।” 29 তখন তিনি তাদের চোখ স্পর্শ করলেন, আর বললেন, “তোমাদের বিশ্বাস অনুসারে তোমাদের প্রতি হোক।” 30 তখন তাদের চোখ খুলে গেল। আর যীশু তাদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলেন, বললেন, “দেখ, যেন কেউ এটা জানতে না পায়।” 31 কিন্তু তারা বাইরে গিয়ে সেই দেশের সমস্ত জায়গায় তাঁর বিষয়ে বলতে লাগল। 32 তারা বাইরে যাচ্ছে, আর দেখ, লোকেরা এক ভূতগ্রস্ত বোবাকে তাঁর কাছে আনল। 33 ভূত ছাড়ানো হলে সেই বোবা কথা বলতে লাগল; তখন সব লোক অবাক হয়ে বলল, “ইস্রায়েলের মধ্যে এমন কখনও দেখা যায়নি।” 34 কিন্তু ফরীশীরা বলতে লাগল, “ভূতদের শাসনকর্ত্তার মাধ্যমে সে ভূত ছাড়ায়।”
যীশু বারো জন শিষ্যকে প্রেরিত পদে নিযুক্ত করেন।
35 আর যীশু সব নগর ও গ্রামে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন; তিনি লোকদের সমাজঘরে উপদেশ দিলেন ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করলেন এবং সব রকম রোগ ও সব রকম অসুখ থেকে সুস্থ করলেন। 36 কিন্তু প্রচুর লোক দেখে তাদের প্রতি যীশুর করুণা হল, কারণ তারা ব্যাকুল হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, যেন পালকহীন মেষপাল। 37 তখন তিনি নিজের শিষ্যদের বললেন, ফসল প্রচুর বটে, কিন্তু কাটার লোক অল্প; 38 এই জন্য ফসলের মালিকের কাছে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজের ফসল কাটার জন্য লোক পাঠিয়ে দেন।