ইয়োব. 15. পরে তৈমনীয় ইলীফস উত্তর দিলেন: “কোনও জ্ঞানবান কি ফাঁপা ধারণা সমেত উত্তর দেবেন বা গরম পূর্বীয় বাতাস দিয়ে তিনি পেট ভরাবেন? অনর্থক কথা বলে, মূল্যহীন বক্তৃতা দিয়ে কি তিনি তর্ক করবেন? কিন্তু তুমি এমনকি চুপিচুপি ভক্তিরও হানি ঘটাচ্ছ ও ঈশ্বরনিষ্ঠায় বাধা দিচ্ছ। তোমার পাপ তোমার মুখকে উত্তেজিত করছে; তুমি ধূর্ততার জিভ অবলম্বন করছ। আমার নয়, তোমার নিজের মুখই তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করছে; তোমার নিজের ঠোঁটই তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে। “মানুষের মধ্যে তুমি কি প্রথমজাত? পাহাড়ের জন্মের আগেই কি তোমার জন্ম হয়েছিল? তুমি কি ঈশ্বরের পরামর্শ শুনেছ? প্রজ্ঞার উপরে কি তোমারই একচেটিয়া অধিকার আছে? তুমি এমনকি জানো যা আমরা জানি না? তোমার এমন কি অন্তর্দৃষ্টি আছে যা আমাদের নেই? পাকা চুলবিশিষ্ট লোকেরা ও বৃদ্ধেরা আমাদের পক্ষে আছেন, যারা তোমার বাবার চেয়েও বয়স্ক। ঈশ্বরের সান্তনা কি তোমার জন্যে যথেষ্ট নয়, মৃদুভাবে বলা কথাও কি কিছুই নয়? তোমার অন্তর কেন তোমাকে বিপথে পরিচলিত করেছে, ও তোমার চোখ কেন মিট্‌মিট্ করছে, যার ফলে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তুমি তোমার উগ্র রোষ প্রকাশ করছ ও তোমার মুখ থেকে এ ধরনের কথা উগরে দিচ্ছ। “নশ্বর মানুষ কী, যে তারা শুচিশুদ্ধ হবে, বা স্ত্রী-জাত মানুষও কী, যে তারা ধার্মিক হবে? ঈশ্বর যদি তাঁর পবিত্রজনদেরই বিশ্বাস করেন না, আকাশমণ্ডলও যদি তাঁর দৃষ্টিতে অকলুষিত না হয়, তবে সেই নশ্বর মানুষ কী, যারা নীচ ও দুর্নীতিগ্রস্ত, যারা জলের মতো করে অনিষ্ট পান করে! “আমার কথা শোনো ও আমি তোমার কাছে ব্যাখ্যা করে দেব; আমি যা দেখেছি তা তোমাকে বলতে দাও, জ্ঞানবানেরা যা ঘোষণা করেছিলেন, তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া কোনো কিছুই লুকিয়ে রাখেননি: (শুধু তাদেরই দেশটি দেওয়া হয়েছিল যখন কোনও বিদেশি তাদের মধ্যে ঘোরাফেরা করত না) দুর্নীতিপরায়ণ মানুষ আজীবন যন্ত্রণাভোগ করে, নিষ্ঠুর মানুষ ক্লেশে পরিপূর্ণ বছরগুলি নিজের জন্য সঞ্চয় করে রাখে। আতঙ্কজনক শব্দে তার কান ভরে ওঠে; যখন সবকিছু ঠিক আছে বলে মনে হয়, তখনই লুঠেরারা তাকে আক্রমণ করে। সে অন্ধকার জগৎ থেকে পালানোর মরিয়া চেষ্টা করে; সে তরোয়ালের জন্য চিহ্নিত হয়ে যায়। সে শকুনের মতো হন্যে হয়ে খাদ্য খুঁজে বেড়ায়; সে জানে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন এসে পড়েছে। চরম দুর্দশা ও মনস্তাপ তাকে আতঙ্কিত করে তোলে; অস্থিরতা তাকে আচ্ছন্ন করে, যেভাবে একজন রাজা আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হন, যেহেতু সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ করেছে ও সর্বশক্তিমানের বিরুদ্ধে নিজেকে আস্ফালিত করেছে, বেপরোয়াভাবে এক পুরু, শক্ত ঢাল নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছে। “যদিও তার মুখমণ্ডল চর্বিতে ঢাকা পড়েছে ও তার কোমর মাংস দিয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরে ও সেইসব বাড়িতে বসবাস করবে যেখানে কেউ বসবাস করে না, যেসব বাড়ি ভেঙে গিয়ে নুড়ি-পাথরের স্তূপে পরিণত হয়েছে। সে আর ধনী হয়ে থাকতে পারবে না ও তার ধনসম্পদও স্থায়ী হবে না, তার সম্পত্তিও দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে না। সে অন্ধকারের হাত থেকে রেহাই পাবে না; আগুনের শিখা তার মুকুলগুলি শুকিয়ে দেবে, ও ঈশ্বরের মুখনির্গত শ্বাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। মূল্যহীন কোনো কিছুতে আস্থা স্থাপন করে সে নিজেকে প্রতারিত না করুক, যেহেতু তার পরিবর্তে সে কিছুই পাবে না। সময়ের আগেই সে শুকিয়ে যাবে, ও তার শাখাপ্রশাখাগুলি আর সতেজ থাকবে না। সে এমন এক দ্রাক্ষালতার মতো হয়ে যাবে যেখান থেকে কাঁচা আঙুর ঝরে পড়ে, এমন এক জলপাই গাছের মতো হয়ে যাবে যেখান থেকে ফুলের কুঁড়ি খসে পড়ে। কারণ ভক্তিহীনদের সমবেত জনসমষ্টি নির্বংশ হবে, ও যারা ঘুস নিতে ভালোবাসে তাদের তাঁবু আগুন গ্রাস করে ফেলবে। তারা সংকট গর্ভে ধারণ করে ও অমঙ্গলের জন্ম দেয়; তাদের গর্ভ প্রতারণা তৈরি করে।”