উপদেশক 
গ্রন্থস্বত্ব 
উপদেশকের পুস্তকটি প্রত্যক্ষ্যভাবে এটার কোনো গ্রন্থকারের নামকে চিহ্নিত করে না। গ্রন্থকার উপদেশকের মধ্যে স্বয়ং নিজেকে পরিচিত করেছেন 1:1 পদের মধ্যে হিব্রু শব্দ “কোহেলেথ” এর দ্বারা, যাকে এইরূপে অনুবাদ করা যায় প্রচারক। প্রচারক নিজেকে এই বলে অগ্রসর হলেন যে তিনি যিরুশালেমের রাজা দাউদের পুত্র, একজন যিনি সকলের থেকে অধিক প্রজ্ঞায় বৃদ্ধি পেয়েছেন যারা যিরুশালেমে আমার সম্মুখে আছে, এবং একজন যিনি অনেক হিতোপদেশ সংগ্রহ করেছেন (উপদেশক 1:1, 16; 12:9)। শলোমন যিরুশালেমের সিংহাসনে দাউদকে অনুসরণ করেছিলেন যেহেতু সেই নগর থেকে সমগ্র ইস্রায়েলকে শাসন করার জন্য কেবলমাত্র দাউদের পুত্রই ছিলেন। সেখানে বেশ কিছু পদ সমূহ আছে যার তাত্পর্য হলো যে শলোমন এই পুস্তকটি লিখেছিলেন। বিষয়বস্তুর মধ্যে কিছু সুত্র আছে যা বলতে পারে যে শলোমনের মৃত্যুর পরে একজন ভিন্ন ব্যক্তি পুস্তকটি লিখেছিলেন, সম্ভবতঃ সহস্রাধিক বত্সর পরে। 
রচনার সময় এবং স্থান 
আনুমাণিক 940 থেকে 931 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়। 
উপদেশকের পুস্তকটি সম্ভবতঃ শলোমনের রাজত্বের শেষের দিকে লেখা হয়েছিল, মনে হয় এটাকে যিরুশালেমে লেখা হয়েছিল। 
গ্রাহক 
উপদেশক প্রাচীন ইস্রায়েলীদের জন্য এবং পরবর্তী বাইবেল পাঠকদের জন্য লেখা হয়েছিল। 
উদ্দেশ্য 
পুস্তকটি আমাদের প্রতি একটি নগ্ন সাবধানবাণী রূপে দাঁড়িয়ে আছে। কোনরকম ধ্যান এবং ঈশ্বরের ভয় ছাড়া জীবন যাপন করা ব্যর্থ, বৃথা এবং বায়ুর পেছনের ছুটে চলা হচ্ছে। আমরা আনন্দ, ধন সম্পদ, সৃজনশীল কার্যকলাপ, প্রজ্ঞা, অথবা সরল আশ্বীর্বাদের পেছনে ছুটে চলি না কেন, আমরা জীবনের শেষ প্রান্তে উপস্থিত হব এবং দেখব যে আমরা বৃথাই জীবন যাপন করেছি। জীবনের অর্থ কেবলমাত্র ঈশ্বরের ওপরে ধ্যান কেন্দ্রিত করার মাধ্যমে আসে। 
বিষয় 
ঈশ্বর ব্যতীত সমস্ত কিছুই দর্প হচ্ছে 
রূপরেখা 
1. ভূমিকা — 1:1-11 
2. জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দর্প — 1:12-5:7 
3. ঈশ্বরের ভয় — 5:8-12:8 
4. উপসংহার — 12:9-14  
 1
বইটির সারাংশ। 
 1 এই হল উপদেশকের কথা, 
দায়ূদের বংশধর এবং যিনি যিরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। 
 2 উপদেশক এই কথা বলেছেন, 
“কুয়াশার বাষ্পের মত, বাতাসে মিশে থাকা জল কণার মত, 
সব কিছুই উবে যায়, অনেক প্রশ্ন রেখে। 
 3 সূর্য্যের নিচে* পৃথিবীর ওপরে  মানুষ সমস্ত কাজের জন্য যে পরিশ্রম করে, 
তাতে তার কি লাভ হয়? 
 4 এক প্রজন্ম যায় এবং আর এক প্রজন্ম আসে, 
কিন্তু পৃথিবী চিরকাল থেকে যায়। 
 5 সূর্য্য ওঠে ও অস্ত যায় এবং 
তাড়াতাড়ি সেই জায়গায় ফিরে আসে যেখান থেকে সে আবার উঠবে। 
 6 বাতাস দক্ষিণে বয় এবং ঘুরে উত্তরে যায়, 
সবদিন তার পথে ঘুরতে ঘুরতে যায় এবং আবার ফিরে আসে। 
 7 সব নদী সমুদ্রে গিয়ে পড়ে, 
কিন্তু সমুদ্র কখনও পূর্ণ হয় না। 
সেই জায়গায় যেখানে নদীরা যায়, 
সেখানে তারা আবার ফিরে যায়। 
 8 সব কিছুই ক্লান্তিকর হয়ে উঠে 
এবং কেউ তার ব্যাখ্যা করতে পারে না। 
চোখ যা দেখে তাতে সে তৃপ্ত নয়, না কান শুনে তাতে পূর্ণ হয়। 
 9 যা কিছু হয়েছে সেটাই হবে এবং 
যা কিছু করা হয়েছে তাই করা হবে। 
সূর্য্যের নিচে কোন কিছুই নতুন নয়। 
 10 এরকম কি কিছু আছে যার বিষয়ে বলা যেতে পারে, 
‘দেখ, এটা নতুন?’ যা কিছুর অস্তিত্ব আছে যা অনেক আগে থেকেই ছিল, 
যুগ যুগ ধরে, যা আমাদের আসার অনেক আগেই এসেছিল। 
 11 প্রাচীনকালে কি হয়েছিল তা হয়ত কারোরই মনে নেই 
এবং সেই সব বিষয়ে যা ঘটেছে অনেক পরে 
আর যা কিছু ঘটবে ভবিষ্যতে সেগুলোর কোনটাই মনে রাখা হবে না।” 
প্রজ্ঞা অর্থহীন। 
 12 আমি উপদেশক এবং আমি ইস্রায়েলের যিরুশালেমের ওপর রাজা ছিলাম।  13 যা কিছু আকাশের নিচে হয়েছে তা আমি আমার মনকে ব্যবহার করেছি জ্ঞান দিয়ে শিখতে এবং সবকিছু খুঁজে বার করতে। ঐ খোঁজ হল খুব কষ্টকর কাজ যা ঈশ্বর মানুষের সন্তানদের দিয়েছেন এটার সঙ্গে ব্যস্ত থাকার জন্য।  14 আমি সমস্ত কাজ দেখেছি যা সূর্য্যের নিচে করা হয়েছে এবং দেখ, তাদের সমস্তই অসার এবং বাতাসকে পরিবর্তন† বাতাস কে খাওয়ার  করার চেষ্টা।  15 যা বাঁকা তা সোজা করা যায় না! যা নেই তা গণনা করা যায় না!  16 আমি আমার হৃদয়ের সাথে কথা বলেছি, “দেখ, আমার আগে যারা সকলে যিরুশালেমে ছিল তাদের থেকে আমি বেশি জ্ঞান অর্জন করেছি। আমার মন মহান প্রজ্ঞা এবং জ্ঞান দেখেছে।”  17 তাই আমি আমার হৃদয় প্রজ্ঞা জানার জন্য ব্যবহার করেছি এবং একইসঙ্গে মত্ততা আর মূর্খতা জানার জন্য। আমি বুঝতে পারলাম যে এটাও বাতাসকে পরিচালনা করার মত ছিল। 
 18 কারণ যেখানে প্রচুর জ্ঞান থাকে সেখানে অনেক হতাশাও থাকে 
এবং সে যে জ্ঞান বৃদ্ধি করে, সে দুঃখও বাড়ায়।